অর্ণব সেনগুপ্ত-র গল্প
ব্যাক ফায়ার
(১)
‘নাম আমার আগুন, রূপে আগুন, ঠাপে আগুন’ – এর পর স্লিম কালারড মোবাইল ফোনটা এত গরম হয়ে উঠেছিল যে তাকে কান আর হাতের স্পর্শে রাখা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছিল। তবু আপ্রাণ চেষ্টায় নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার তীব্র চেষ্টা চালাচ্ছিলেন কমরেড কামু ভট্টাচার্য। সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের ধান আলু লংকা রসগোল্লা পশু পুলিশ ধর্ষক বোমারু মোটরগাড়ি... বিভাগের মন্ত্রী ও পলিটব্যুরো সদস্য। কিন্তু শেষপর্যন্ত কুটিল সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের শিকার হল তার কাব্যিক কামুক অনুভূতি। একটানা কুকুরবে এনগেইজ টোন ছাড়া আর কিছুই কানে আসছিল না তার। বাধ্যতই গরম মোবাইল সেটটা টেবিলের ওপর রেখে দিলেন, অবলোকন করলেন নিজের হাত – কিঞ্চিত্ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। শরীরের অন্য অংশের দিকে চোখ ঘোরাতে গিয়ে রীতিমতো ঘাবড়ে গেলেন তিনি। আর একটু হলে চেয়ার থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গেলেন না প্রায়-বিলুপ্ত ইতিহাস মনে পড়ে যাওয়ায়। অবাক হয়ে দেখলেন তার নিজের বাড়া লম্বা হতে হতে তার মাথা স্পর্শ করতে চলেছে। টিপে দেখলেন বেজায় শক্ত। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নরম নিস্তেজ হয়ে লুটিয়ে পড়ার কোনো সিন নেই। ইতিহাসটা কী? মনে পড়ল তার, কৈশোরে কলেজ কেটে জীবনের প্রথম ব্লু-ফিল্ম দ্যাখার সময় ঠিক এ রকমই হয়েছিল তার। এক সপ্তা বাড়িতে ফিরতে পারেননি। ঢপ দিয়েছিলেন বাড়িতে, পার্টির কাজে গ্রামে যেতে হয়েছে বলে। ডাক্তারের ডায়াগনসিসটাও মনে পড়ল তার – বাড়াহিটসহেড ডিজিজ। একুশটা প্রকাণ্ড ইঞ্জেকশন পুশ করার পর নিস্তেজ হয়েছিল ব্যাটা। কিন্তু তারপর বহু রাত, বহু সকাল, বহু দুপুর গড়িয়ে গ্যাছে। এই বাড়া নিয়েই তো বহু ক্রীড়ায় মত্ত হয়েছেন তিনি। তাগড়াই তাগড়াই রাশিয়ান চিনা ভিয়েতনামিজ কিউবান কেরালাইট কমিউনিস্ট নেত্রীদের কাম ক্রীড়ায় কাত করেছেন তিনি। তবে আজ কী হল? সামান্য এক কামোন্মত্ত টেলি যোগাযোগ তাকে চিত্ করে দিল। ড্রয়ার থেকে বের করলেন কমরেড লেনিনের লেখা “What is to be done”। সবে সূচিতে চোখ বোলানো শুরু করবেন অমনি নিজের তিনটি মোবাইল ফোন আর দশদিকে রাখা দশটি ল্যান্ড ফোন একসঙ্গে বেজে উঠল। সে রাতে কলকাতার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের টপ বসের ঘরে রাখা একাধিক ফোন এইভাবেই একসঙ্গে বেজে উঠেছিল। সারাদিন কর্মব্যস্ততার পর সন্ধে থেকে রাত নটা সাড়ে নটা অবধি এই সময়টুকুই তাদের নিজস্ব অনুভূতি নিঃসরণের সময় মানে কাব্যিক, কামুক, অ্যালকোহলিক ইত্যাদি আর কী। ফলত বলাই বাহুল্য কামু বাবুর মতো তারাও আর নিজেতে ছিলেন না। এই ধরাধামের বহু গজ ঊর্ধ্বে তখন তাদের বিচরণ। অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গিতে। হোয়াইট রামের গেলাস হাতে, কেউবা নরম লাউডগার মতো তন্বী বা বেশ ফুলো ফুলো ডাগর ডোগর নারীর সাথে, চলমান ল্যাপটানো পোজে আর যাদের কিছুই জোটেনি কপালে তারা নিজেদের আখাম্বা হাতে মানে হ্যান্ডেলরত অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু বাধ সেধেছিল টেবিলের দশ দিকে রাখা দশটা টেলিফোন আর পার্সোন্যাল মোবাইল ফোন। এক ফোনের রিসিভার নামিয়ে রাখেন কিংবা কোনো মোবাইল সুইচ অফ করেন তো পরমুহূর্তে অন্যটা বেজে ওঠে। অনেকটা রামায়ণের রাম রাবণ-এর যুদ্ধের মতো। রাম একটা মাথা কাটছে তো রাবণের অন্য মাথা তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হচ্ছে। শেষমেশ বাধ্যতই ফোন রিসিভ করতেও হয়েছিল প্রত্যেককে। জরুরি তলব পড়েছিল তাদের। শুধুমাত্র এদের নয়, পার্টির নরকতলা থেকে স্বর্গতলা পর্যন্ত সমস্ত কমরেডকেও হাজিরা দিতে হয়েছিল। সবার গন্তব্য ছিল গলাকাটা গলির পাঁচ নম্বর বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ড ফিফ্থ ফ্লোর। কী এমন বাওয়াল ঘটেছিল যে সবাইকে একসাথে কলকাতার বহু স্টেপ ঊর্ধ্বে অবস্থিত ভার্চুয়্যাল কলকাতা-র ক্যাওড়ামো ছেড়ে পাতালপুরীতে প্রবেশ করতে হয়েছিল? বাওয়াল রুখতে কী ব্লু-প্রিন্টই বা তৈরি হচ্ছিল? তা কেউ জানতে পারেনি। প্রেসের প্রশ্নের সামনে সবাই পকেটে রাখা ওয়াকম্যান অন্ করেছিল। আর তা থেকে সুরেলা নারী কণ্ঠ জানিয়েছিল, “ইয়ে অন্দর কী বাত হ্যায়।” সম্ভবত এই কারণেই সে সময়ে কলকাতায় 'ডলার' গেঞ্জি জাঙিয়ার বিক্রি খুব বেড়েছিল।
সেই ফিচেল কলকাতার রাতে সিটি সেন্টারে নাইট শো ছিল হাউসফুল। চলছিল শাহরুখ-এর ওম শান্তি ওম। পাশাপাশি বসে সিনেমা দেখছিল সোনাগাছির টপমোস্ট বেশ্যা শবনম, তরুণ নটদাদা রুদ্রকণ্ঠ মিত্র আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড ম্যাথের প্রফেসর আগুন, দ্য মোস্ট ওয়ান্টেড। কিন্তু ইন্টারভ্যালের কিছুক্ষণ পরই সমস্ত দর্শক একজোট হয়ে হল থেকে বের করে দিয়েছিল তাদের। এর পিছনে কারণ অজস্র। উল্লেখ্য, ছয়: দীপিকা পাড়ুকোন স্টুডিওর ভিতর জ্বলছে। শাহরুখ আপ্রাণ চেষ্টা করছে তাঁকে বাঁচানোর, ঢুকে পড়ছে জ্বলন্ত স্টুডিওর ভিতর। সবাই ভাবছে এইবার, এইবার হয়ত শাহরুখ পারবে মিরাকল ঘটাতে। হলময় কমপ্লিট সাইলেন্স। ঠিক সেই সময়ই উত্তেজিত আগুন হাততালি দিয়ে ওঠে। সেই অকওয়ার্ড হাততালির চোটে এক মিনিট প্রজেকশন বন্ধ হয়ে যায় রিল জড়িয়ে। আট: বিরতির আগের লাস্ট সিকোয়েন্সে মারা যাচ্ছে শাহরুখ। শেষ নিশ্বাস ফেলার আগের সেকেন্ডে হঠাৎই সুতীব্র গর্জনে পেদে দ্যায় রুদ্রকণ্ঠ মিত্র। তৎক্ষণাৎ স্পটে গন্ধ আর আওয়াজ মিশ্রিত কারণে অজ্ঞান হন দশ জন দর্শক। তেরো: ইন্টারভ্যালের পর পরবর্তী জন্মে আবার মিলিত হচ্ছে শাহরুখ, দীপিকা। এবার গর্জে ওঠে শবনমের নিতম্ব। আবার বহুলোক অজ্ঞান হন আর বাধ্যতই বাকিরা বেঁচে থাকার তাগিদে একজোট হয়ে বের করে দ্যায় ওদের তিনজনকে।
ওরা তিনজন হল থেকে বেরিয়ে এখন হাঁটছে, হলুদ আলোয় মোড়া রাস্তা দিয়ে হাডকোর দিকে। ওরা পরস্পর বন্ধু। এ তথ্য লেখা আছে ওদের ওয়েবসাইটে। www.chudupudu.com। বন্ধুত্বের কারণ বলে একটা লিংক দেওয়া আছে সাইটে। যেখানে ক্লিক করলে ভেসে ওঠে “পুরানে বাতে ভুল জানাহি আকল কে বাত হ্যায়” আর “সমঝদারও কে লিয়ে ইশারাহি কাফি হ্যায়”। ওয়েবসাইটের আর্কাইভ সেকশনে পাওয়া যাবে রুদ্রকণ্ঠ মিত্র-র নাট্যভাবনা, নাট্যতত্ত্ব, নাটকের স্ক্রিপট, অডিও-ভিডিওয় নাটক; আগুন-এর লেখা ম্যাথমেটিক্যাল প্রবন্ধ যেমন – চোদনে ম্যাথ, ক্রিকেটে ম্যাথ, সুইসাইডে ম্যাথ, পেচ্ছাপখানা খোঁজায় ম্যাথ; আর শবনম রচিত কামশাস্ত্র, কামগদ্য, কামকাব্য। আর তিনজনের যৌথ নির্মাণ চলচ্চিত্র – “চোদার আশায় দিন যায়”। হাডকো পেরিয়ে বিধাননগর স্টেশন যাওয়ার পথে তিনজন উঠে আসে ফ্লাইওভারের ওপর। ঠিক মিড পয়েন্টে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে রুদ্রকণ্ঠ মিত্র, হিলহিলে স্বরে আগুন আর শবনম কোরাসে উচ্চারণ করে, “পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরা দোস্ত”। সেই সুর ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার দশ কোণে, এমনকী XXL ভার্চুয়াল কলকাতার আর রিরাইটেইবল পাতার কলকাতায়ও। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ করে উল্টোডাঙ্গার সোনি মিউজিক-এর শোরুমে চালানো গান দিল্ মে মেরে হ্যায় দর্দে ডিস্ক...
২
কলকাতার ক্রিক রো-এর অ্যালচুদিনো রেস্তোরার ব্যাংকোয়েট হলে চলছে কামিনী ভট্টাচার্য মানে কামু ভট্টাচার্য-র রিয়্যাল লাইফটাইম কমরেড, মানে রেজিস্টার্ড বেড পার্টনার-এর বই প্রকাশ অনুষ্ঠান। আজকের এই সন্ধেতে শিয়ালদা থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত জোনে মিডিয়ার এনট্রি প্রোহিবিটেড, কিন্তু ইলেকট্রনিক নিউজে উইদাউট ভিস্যুয়াল বাইট খবরটা প্রতি তিরিশ মিনিট অন্তর প্রচার করতে বাধ্য হচ্ছে সব চ্যানেল – আদেশানুসারে। লাল রিবনের ফাঁস খুলে জংলি প্যাকেট থেকে বইটি বের করেন উদ্বোধক রাকেশ মেহরা। অন্য পরিচয় কামিনী ভট্টাচার্যর ভার্চুয়াল লাইফ পার্টনার আর XXL কলকাতা নির্মাণকারী সংস্থা লকস্মী ইন্টারন্যাশনাল-এর ভোল্টেজ মিটার।
জংলি প্যাকেট খুলে বই বের করা মাত্র তার ওপর দশ কোণের দশটা পার আলোর দশ হাজার ওয়াট আলো আপতিত হয়। স্বভাবতই প্রতিফলনের সময় তারা দিগ্ভ্রান্ত হয়ে ভুলভাল গলিতে ঢুকে পড়ে। ফলত উপস্থিত অনেকেরই আন্দারের দেহঢাকা পোশাকের বিশেষ বিশেষ অংশ হাইলাইটেড হয়ে ওঠে। যাক সে কথা, বইকে তার পরণের জামা খুলিয়ে ন্যাংটো করা মাত্র হাততালি দিয়ে ওঠে সবাই। সবাই বলতে উপস্থিত হয়েছেন কলকাতার টপ টপ আমলা, মন্ত্রী, স্বর্গতলার পার্টি কমরেড, পশ্চিমবঙ্গ রেনোভেটকারী বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনালের টপ বস, বাংলা ছবির সেক্সি নায়িকা, সিক্সপ্যাক নায়ক, গ্রুপ থিয়েটারের চাপদাড়ি ঢ্যামনা মাগ, পাছামোটা থলথলে চনমনে মাগী। আর আগুন, শবনম, রুদ্রকণ্ঠ মিত্র। আদেশানুসারে এদের ক্যামেরা, মোবাইল ফোনও হলের গেটে জমা নেওয়া হয়। হাততালির সাথে সাথে দশ কোণের উফার থেকে প্রোজেকটেড হয় DHOOM 2-এর গান ক্রেজি কিয়া রে...। ড্রামসের বিটে নিতম্ব দুলিয়ে রয়্যাল ব্লু কালারের কাঞ্জিভরম, অর্নামেন্টস পরিহিত রয়্যাল ব্লু ঠোঁটের ক্রেজি কামিনী দেবী নিজের বই হাতে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকেন পুং-সমুদ্রে। তাদের হাতে তুলে দ্যান বই। বইয়ের নাম – “পশুর আমি পশুর তুমি”। কামু বাবু এখন অশ্বমেধের ঘোড়া। ছুটে চলেছেন নারীময় প্রান্তরে। এক নারী বক্ষ থেকে অন্য নারী বক্ষে। এক নারী নিতম্ব থেকে অন্য নারী নিতম্বে। হঠাৎই অশ্বমেধ ঘোড়া বন্দি হয় দুই নারীর বক্ষমধ্যস্থলে। পায়ের নখ থেকে মাথার চুল অবধি দুজনের দেহে নিজের বিস্ফারিত নেত্র বুলাতে থাকেন কামু বাবু। এদের একজন শবনম, অন্য জন আগুন। আগুন পড়ে আছে গোল্ডেন ইয়েলো কালারের সিল্ক। ঠোঁটময় গোল্ডেন ইয়েলো আভা। কালো রঙের জামদানিতে শরীর জড়িয়ে রেখেছে শবনম। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। দুজনেরই ব্লাউজ স্লিভলেস, লো-কাট, সি-থ্রু; যা জানান দিচ্ছে ভিতরে থাকা 10 mm থিক শুভ্র ব্রেসিয়ার স্ট্র্যাপের হদিশ। ভদকার গেলাস হাতে থেকে থেকেই খিলখিল করে হাসছে দুজন। সে-হাসির ভাইব্রেশনে বুক থেকে গড়িয়ে পড়ছে আঁচল। ভিস্যুয়ালাইজেশনে আনছে স্তন মধ্যবর্তী বিভাজিকাকে। কখনও বা স্ট্যান্ড ফ্যানের হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে শাড়ির আঁচল দিক বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে। দৃষ্টিগোচর হচ্ছে সুগভীর নাভিছিদ্র। এ সবই দেখছেন কামু বাবু। কপি-পেস্ট করে সেভ করছেন মগজ আর হৃদয়ের মেমরি কার্ডে তৈরি নতুন ফোল্ডারে, যার প্রপার্টি অবশ্যই হিড্ন। কারণ এ তো ফ্রি অথবা পারচেজেইবল ফোল্ডার নয়। তাই এত সতর্কতা। এত কিছুর সঙ্গে আবার দক্ষ সিলি পয়েন্টের ফিল্ডারের মতো ডাইভ মেরে ক্যাচ করছেন আঁচল। আর তার পর দীর্ঘ সময় নিয়ে তা স্থাপন করছেন যথাস্থানে, যতক্ষণ-না অন্যজনের আঁচল খসে পড়ছে। যত সময় যাচ্ছে কামু বাবু হয়ে উঠছেন কখনও ক্রেজি, কখনও কুল। ব্যারিটোন ভয়েসে ফোন নাম্বার চান দুই তরুণীর। খিলখিল হাসিতে গড়িয়ে পড়ে ওরা দুজন। ছেনালি দৃষ্টিতে বিদ্ধ হন কামু। ওরা মিলিয়ে যেতে থাকে ভিড়ে। অস্ফুট হাস্কি গলায় উচ্চারণ করে “উই উইল কল ইউ ভেরি সুন”, কোরাসে। হলের বিপরীত কোণে এখন বজ্রকণ্ঠ মিত্রর বজ্রবাহুতে আবদ্ধ কামিনী। ঠোঁট আর বুক, একে অন্যেরটায় রোল করাচ্ছে ওরা। হলের মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে কামিনীর রয়্যাল ব্লু কাঞ্জিভরম।
এখন বাড়ি ফিরছে কামু কামিনী। রাত দশটায় পার্টি শেষ হয়েছে। ওদের বুলেটপ্রুফ গাড়ি ছুটে চলেছে নীলচে আলোয় মোড়া বাইপাস দিয়ে সল্টলেকের দিকে। কিন্তু একটা খটকা থেকেই যাচ্ছে। যদি সমস্ত মিডিয়া প্রোহিবিটেড হয়েই থাকে, তাহলে এই গল্পের আগের প্যারার ভিস্যুয়াল ফুটেজ সাপ্লাই করছে কে? কী সেই বাওয়ালি, যা ভেদ করছে “আদেশানুসারে”-র রক্ষাকবচ। ছুটন্ত অন্ধকার গাড়ির ভিতর মাঝেমাঝে ঝাপটা মারছে বাইপাস-এর নীলচে আলোর স্রোত। সেই আলোর স্রোতে অস্পষ্ট হলেও বোঝা যাচ্ছে ফেভিকুইক লাগিয়ে কামু কামিনী পরস্পর পরস্পরে ফিক্সট হয়ে আছে। মাঝে মাঝে সেই ফিক্সট বিভঙ্গই গড়িয়ে যাচ্ছে সিটের এক পাশ থেকে আর এক পাশে। সফট ভয়েসে বাজছেন বিটোফেন। হঠাৎই খনা গলায় গাড়ির ডেক থেকে শব্দ নির্গত হয় – “পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরা দোস্ত”। ফেভিকুইকের মজবুত জোড় ভেঙে কামু কামিনী ছিটকে পড়ে সিটের দু'প্রান্তে।
৩
পাতালপুরীর গোপন মিটিং সেরে এখন কমরেড কামু ভট্টাচার্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি করে ছুটে চলেছেন বাড়ির দিকে। জরুরি মিটিং বলেই বাড়াহিটসহেড ডিজিজ নিয়েও তাকে আসতে হয়েছে। অবশ্য কেউ যাতে তার নতুন রূপ দেখতে না পারে, সে জন্য অনেক প্রিকশনও নিতে হয়েছে তাকে। অসুস্থতার কথা বলে সমস্ত কমরেডদের সঙ্গে এক ঘরে মিটিং-এ বসেননি। কমরেডরা ছিল আন্ডারগ্রাউন্ডের ফিফ্থ ফ্লোরে, আর উনি সিক্সথ ফ্লোরে। দুটো ফ্লোরকে ক্যামেরা, স্ক্রিন, ল্যাপটপে সংযোগ ঘটিয়ে ডিসকাশন চলেছে। কমরেডদের ঘরে বড়ো স্ক্রিনে ওনার স্টিল ছবি ফুটেছিল সারাক্ষণ। আর বক্সে প্রোজেক্ট হচ্ছিল ভয়েস। আর সেভেন্থ ফ্লোরে ল্যাপটপের মনিটারে কামু বাবু খুঁটিয়ে দেখেছেন কমরেডদের মুখ, হেডফোনে শুনেছেন ওদের আওয়াজ। বোঝার চেষ্টা করেছেন তাদের আত্মবিশ্বাসে কতটা ভাঁটা পড়েছে। প্রতি মুহূর্তে বুস্ট-আপ করার চেষ্টা করেছেন কমরেডদের।
গাড়িটা এই মাত্র নন্দন ক্রস করল। আসন্ন বাওয়ালের চিন্তায় কামু বাবু ঘামছেন। যথাস্থানে না নামলেও আস্তে আস্তে বাড়াটা অনেকটা নেমে এসেছে। তবে এখনও উচ্চতা প্রায় বুক সমান। হাত দিয়ে টেপেন। আগের থেকে নরম হলেও এখনও এটা বেশ শক্ত। আগুন-এর কথা মনে পড়ে। কামিনীর বই প্রকাশ পার্টিতে ফোন নাম্বার চেয়ে আগুন আর শবনম-এর দেওয়া উত্তরও মাথায় ঝিলিক মারে। মেলানোর চেষ্টা করেন সব কিছুকে। কামিনীর পার্টি... শবনম... আগুন... এক মাস পর আজ আগুন-এর ফোন... মোবাইলের গরম হাওয়া... শৈশবের রোগের প্রত্যাবর্তন... আর ভয়ংকর থ্রেট। সমস্ত কিছু গুলিয়ে যায়। মোবাইল ফোনের কল লিস্ট খুলে ইনকামিং কল মেমরি থেকে ডায়াল করেন আগুনের নাম্বার। রিপ্লাই আসে সুইচ অফ। একই উত্তর আসে ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান ড. বোস-কে ফোন করলেও। কামু বাবু ভাবতে থাকেন তাঁর চল্লিশ বছর পার্টি জীবনে কত চ্যালেঞ্জ তিনি হেলায় গুড়িয়ে দিয়েছেন। নকশাল, মাওবাদি, সাম্রাজ্যবাদী, আল-কায়দা আরও কত কী। কিন্তু আজ যে-চ্যালেঞ্জ সন্ধ্যায় মহাকরণে, লালবাজারে, সরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, সিআইডি-র ঘরে ইমেল মারফত ল্যান্ড করেছে তা সম্পূর্ণ মিস্টেরিয়াস। ইমেলে অ্যাটাচ্ট পিডিএফ-এ যা লেখা ছিল:
বন্ধু,
আমরা হাতি। মানে 'e' ফর এলিফ্যান্ট। আমরা কোনো রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় সংগঠন, বা এনজিও-র মদতপুষ্ট নই। আমরা হাতিরা, জংলি হাতিরা, পৃথিবীর বৃহৎ বৃহৎ অরণ্যে আমাদের বাস। আমরা সমস্ত প্রান্তের জংলি হাতিরা জোটবদ্ধ হয়ে কাল দশ দিক থেকে কলকাতার দশটা জায়গা, যথা – কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, সোনাগাছি, অ্যাকাডেমি অভ্ ফাইন আর্টস, সিটি সেন্টার, ইডেন, নন্দন, পার্ক স্ট্রিট, শিয়ালদা স্টেশন, গড়িয়াহাট, বেহালা চৌরাস্তা তছনছ করে দেবো।
বিনীত,
হস্তিমস্তি
সম্পাদক
অল ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড হাতি অ্যাসোসিয়েইশন
ইমেল আইডি: awwha@hatimeresathi.com
ওয়েবসাইট: www.hati.com
মনে মনে হেসে ওঠেন কামু। হতে পারে পুরোটাই জোক, কিন্তু সাবধানের মার নেই। একঘণ্টার মধ্যে ঢেলে সাজিয়েছেন পুরো শহরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। রাতটুকু শুধু পঞ্চাশ হাজার পুলিশ পাহারা দেবে। আর সকাল হলেই এক্সিকিউট হবে বাকি প্ল্যানিং। এর সঙ্গে গলিতে গলিতে, পাড়ায় পাড়ায়, উথদ্ আর্ম পাহারা দিচ্ছে পার্টির পাঁচ লক্ষ কমরেড। ইমেলে থ্রেট-করা এরিয়াগুলোতে বাড়তি রাখা হয়েছে জলকামান, আর অত্যাধুনিক বম্। ক্লান্তিতে কামু বাবু শরীরটা এলিয়ে দ্যান নরম সিটে। ভাবতে থাকেন আগুনের কামোন্মত্ত সংলাপ – “কাল রাত সাড়ে নটায় আমি আর শবনম অপেক্ষা করব, তোমার জন্য, গড়িয়াহাটের ওয়াইল্ড হোটেলের থার্ড ফ্লোরের একশ দুই নম্বর রুমে”। প্রথমটায় গলাটা চিনতে না-পেরে উনি বলেছিলেন “কে আপনি?” চটপট রিপ্লাই আসে, “নাম আমার আগুন, রূপে আগুন, ঠাপে আগুন”। হঠাৎই কামিনীর কথা মনে পড়ে। কামিনী এখন জলপাইগুড়িতে আছে। আজ ওখানে পশু দিবস উদ্যাপন করেছে। কাল করবে কলকাতায়। কামিনী-কে রিং করেন।
জলপাইগুড়িতে এখন ক্লোজ সিকোয়েন্স চলছে। রাকেশ মেহরা-র কোলের ওপর কামিনী। দুজনেই প্রায় উদোম। প্রায় শব্দটা বসানোর কারণ, রাকেশ এখন খুলতে চলেছে কামিনীর ব্রা। উন্মুক্ত পিঠের ওপর রাকেশ-এর আঙুল চলাফেরা করতে করতে পৌঁছে যায় ব্রায়ের হুকের উপর। খোলার মুহূর্তকে থমকে দ্যায় মোবাইলের রিং। অস্বীকার করতে চায় সে-শব্দকে রাকেশ। কিন্তু তাকে নিরস্ত্র করে বাহুবন্ধনে থাকা অবস্থাতেই ফোন ধরে প্রায়-উদোম কামিনী। কামিনী-কে গোটা ইমেল পড়ে শোনায় কামু। হাসতে থাকে কামিনী। আর নিজের শরীরকে সাপের মতো রাকেশ-এর শরীরের গলি থেকে গলতায় চালনা করে। শেষমেশ কামু-কে আস্বস্ত করে কামিনী বলে, “ডোন্ট ওরি, আই উইল বি দেয়ার অল দ্য টাইম বাবা। ও কে টেল হু অ্যাম আই। দ্য মাদার অভ্ অল দ্য ওয়াইল্ড অরফ্যান ডিসেব্ল্ড ক্রিয়েচার্স। দেখো, আমার সামনে সমস্ত হাতি কী-রকম ঠান্ডা হয়ে যাবে, উইদিন আ মিনিট, ও কে, গুড নাইট”। ফোন রেখে দ্যায় কামিনী, অবশ্য ততক্ষণে খোসা ছাড়িয়ে কামিনীর বুককে নিরাবরণ করে ফেলেছে রাকেশ। এখন শুধু রাকেশ আর কামিনী। দাপাদাপি করে চলেছে পরস্পর পরস্পরের ওপর। কামড়ে দিচ্ছে, আঁচড়ে দিচ্ছে একে অন্যকে।
গাড়িটা এখন লেনিন মূর্তি ক্রস করছে। গাড়ির কাচ নামিয়ে, স্লো করে দেখতে থাকেন কামু। একদৃষ্টে দেখতে থাকেন লেনিন-এর দিকে। কী খুঁজে চলেন মূর্তির গায়ে? What is to be done? গাড়িটা আবার স্পিড নিচ্ছে। ল্যাপটপ খোলেন কামু। ইমেল এসেছে সিআইডি-র কাছ থেকে – “No trace of email number and website yet found. One video file just arrived through email from the same ID”। সঙ্গে একটা অ্যাটাচ্ট ভিডিও। চালিয়ে তাজ্জব বনে যান কামু। ভিডিও-র নাম, “কামু কামিনী”। দশ মিনিটের ভিডিওয় এডিট করে কামিনী-র বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিশেষ বিশেষ কয়েকটা মুহূর্ত সাজানো আছে। শটগুলো কয়েকটা এ রকম: আগুন আর শবনম-এর আঁচল ধরে কামু – মিড ক্লোজ টপ অ্যাংগেল শট। ফেইড ইন করছে মিড ক্লোজ লো অ্যাংগেল শট – ধীরে ধীরে আঁচলটাকে রাখছেন স্বস্থানে, যতক্ষণ-না অন্য জনের আঁচল খসে পড়ে। বিগ ক্লোজ আপ – বজ্রকণ্ঠ মিত্র-র বাহুতে আবদ্ধ কামিনী, কামিনী-র ঠোঁট বুক মিশে যাচ্ছে বজ্র-র ঠোঁটে বুকে। হয়রান হয়ে যান কামু। আদেশানুসারের তীব্র আঁটুনি ভেদ করে ক্যামেরা ঢুকল কী করে এই ভেবে। পরমুহূর্তে সিআইডি-তে গোটা বিষয়টা জানাজানি হওয়ার লজ্জায় কুঁকড়ে ঢুকে যেতে থাকেন গাড়ির সিটের ভিতরে। নিজেকে সামলে ফোন করতে যান সিআইডি কর্তা-কে, যাতে ভিডিওটার ব্যাপারে অন্য কেউ জানতে না পারে। ঠিক তখনই ল্যাপটপ স্ক্রিনে ফুটে ওঠে – “পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরা দোস্ত”।
৪
সূর্য ওঠার আগেই কলকাতা দখল নিয়েছে দশ হাজার সিআরপি, পাঁচ হাজার প্যারামিলিটারি, পঞ্চাশ হাজার পুলিশ। আর পাঁচ লাখ আর্মড ক্যাডার ঘুমের নেশা ঝেড়ে ফেলে আরও সজাগ হয়ে ওঠে। সারা রাত তন্দ্রার মধ্যে কেটেছে কামুরও। হাত দিয়ে দ্যাখেন বাড়াটা সম্পূর্ণ নেতিয়ে গ্যাছে। একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। ঝালিয়ে নেন শিডিয়্যুল। সকাল দশটা থেকে বারোটা – মিটিং – সিআইডি চিফ, সরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ কমিশনার-এর সঙ্গে। দুপুর দুটো থেকে পাঁচটা – কামিনী-র পশু দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি। সন্ধে ছ'টা তিরিশ – অ্যাকাডেমি অভ্ ফাইন আর্টস-এ রুদ্রকণ্ঠ মিত্র-র নতুন নাটকের প্রদর্শনী ও নাট্য উৎসবে প্রধান অতিথি। রাত সাড়ে নটা – গড়িয়াহাটের ওয়াইল্ড রেস্তোরাঁয় অ্যাপো উইথ্ শবনম অ্যান্ড আগুন।
দুপুর দুটো অবধি এখনও কোনো হাতি অ্যাটাক হয়নি। কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন সবাই, বিশেষ করে কামু বাবু। কিন্তু এখনও তাঁরা প্রত্যেকে প্রতি সেকেন্ডে একই রকম অ্যালার্ট। গোটা বিষয়টা তাঁরা এখনও মিডিয়া আর পাবলিক-এর থেকে হাইড করে রেখেছে। ওদিকে দুটোয় শুরুও হয়ে গ্যাছে পশু দিবসের অনুষ্ঠান ময়দানে। পৌঁছে গ্যাছেন কামু ভট্টাচার্য রাকেশ মেহরা সহ সমস্ত অতিথিই। হাজির হয়েছে কলকাতার টপ পয়সা খেঁচা ইস্কুলগুলোর বাচ্চারা আর প্রচুর অফিসকাটা কেরানি। লাইভ টেলিকাস্ট শুরু হয় সমস্ত চ্যানেলে। বিশাল মঞ্চে সমস্ত অতিথি, তার দু'ধারে অর্ধবৃত্তাকারে খাঁচায় পশুরা নিজেদের জেন্ডার অনুযায়ী কসটিউম পরিহিত। না ঠিক খাঁচা না, বিভিন্ন পশুর উপযোগী বিভিন্ন কৃত্রিম প্রাকৃতিক পরিবেশ। আর সামনে খাঁচার শিকের অনুকরণে সারি সারি কৃত্রিম সরু সরু গাছ। বক্তৃতার পর শুরু হয় পশুদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঘোষণা করতে থাকেন কামিনী। পশুরা খাঁচা থেকে বেরিয়ে সুশীল মানুষের মতো নাচতে থাকে ট্রেইনারের নির্দেশে – রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মানুষের মতো কথা বলতে পারে। তারা ইংরেজিতে দর্শকের সঙ্গে কথা বলে, হাত মিলায়। এতক্ষণ সব ঠিকঠাক সুন্দরই ছিল। কিন্তু হঠাৎই উত্তেজিত কামিনী মঞ্চ থেকে নেমে আসেন মাঠে, পশুদের মধ্যে। একটি মেয়ে কুকুর আর একটা ছেলে কুকুরকে নির্বাচন করে মাঝখানে দাঁড়িয়ে পোজ দিতে থাকেন। কেলো কাকে বলে! সুশীল কুকুরদুটো হঠাৎই বাওয়াল হয়ে ওঠে। দুজনেই কামিনী-র দুহাত কামড়ে ধরে। তারস্বরে চিৎকার করে কামিনী অজ্ঞান হয়ে যান। কুকুরদুটো গোটা মাঠময় দৌড়তে শুরু করে। মাঠময় হুড়োহুড়ি শুরু হয়। দর্শক, অতিথিরা পালাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ, মিলিটারির যৌথ প্রচেষ্টায় গোটা ঘটনাটা আয়ত্তে আনেন কামু বাবু।
এখন বিকেল পাঁচটা। উডল্যান্ডস্ নার্সিংহোমে কামু বাবু। কামিনী দেবী এখন অনেকটাই সুস্থ। কিন্তু ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী ওনাকে কয়েকদিন অ্যাডমিটেড থাকতে হবে। কামিনী বাড়ি ফিরতে চাইলেও তাঁকে থাকার জন্য জোর করেন কামু। অগত্যা থেকেই যেতে হয় কামিনী-কে। কামু বেরিয়ে আসেন নার্সিংহোম থেকে। বেশ খুশিই হয়েছেন তিনি, কামিনী-র বাড়ি না ফেরায়। কারণ, আজ রাত তাহলে নির্বিঘ্নে কাটানো যাবে, শবনম আর আগুন-এর সাথে। আসন্ন বাওয়ালের থ্রেটও অনেকটা কেটে যাচ্ছে। এখন অবধি হাতি অ্যাটাক হয়নি। বিকেল সাড়ে ছ'টায় রুদ্রকণ্ঠ মিত্র-র আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব উদ্বোধন করে নাটক দেখতে বসেন কামু হাউসফুল অ্যাকাডেমিতে। আজকের এই নাট্য প্রদর্শনী শুধুমাত্র ভিনদেশ থেকে আসা নাট্যদলের সদস্য অভিনেতা নির্দেশকের জন্যই। নাটক শুরুর আগে রুদ্রকণ্ঠ মিত্র ঘোষণা করেন, “আজ আমাদের রক্তকরবী নাটক এখানে মঞ্চস্থ করার কথা ছিল। কিন্তু বিশেষ অসুবিধার কারণে আমরা ওই নাটকটার বদলে আমাদের নতুন নাটক যা উৎসবের শেষ দিনে প্রদর্শিত হবে বলে নির্ধারিত ছিল – 'চোদনকীর্তন' – আজ উপস্থাপিত করছি”। নামটা শুনেই আঁতকে ওঠেন কামু, আর তার পর মঞ্চে ঘটে চলা অশ্লীল কাণ্ড দেখতে না-পেরে তাঁর ডান হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে ওঠে। কাঁধের ওপর। কাঁধ আর মাথার সঙ্গে ত্রিভুজাকৃতিতে স্থাপিত হতে চায়। প্রতিবাদের ভাষা বেরিয়ে আসার আগেই লক্ষ করেন আশেপাশের সবাই ভয়ংকর উপভোগ করছে প্রতিটা দৃশ্য। তুমুল হাততালিতে গমগম করছে গোটা প্রেক্ষাগৃহ। ত্রিভুজাকৃতি বিভঙ্গ ব্রেক করে হাত যথাস্থানে নেমে আসতে থাকে। বুঝতে পারেন, সবাই বিদেশি বলে তাঁকে একা পেয়ে মোক্ষম চাল চেলেছেন রুদ্রকণ্ঠ মিত্র – তাঁর সামনে এ-রাজ্যের সংস্কৃতির পীঠস্থানকে কলুষিত করছেন তাঁকে জোর করে নীরব রেখে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফ্যালেন, কাল সকালেই মাওবাদি সন্দেহে অ্যারেস্ট করবেন রুদ্র-কে। কোথায় যেন মনে হয় রুদ্রকণ্ঠ মিত্র আর হাতির থ্রেট পরস্পর ওভারল্যাপ্ট। হঠাৎই মঞ্চের সব অভিনেতাদের রূপান্তরিত হতে দ্যাখেন হাতিতে। মঞ্চ জুড়ে এখন শুধু পাল পাল জংলি হাতি। আবার পরমুহূর্তেই মানুষ। ভয়ে তাঁর নিজের শরীরটা গুটিয়ে গেলেও অনুভব করেন বাড়াটা আবার লম্বা হচ্ছে। ঠিক সেই সময়েই আগুন-এর মিস্ট কল আসে। অ্যাকাডেমি থেকে পাগলের মতো ক্ষিপ্রতায় রওনা হন কামু। নাটকের তখন সবে মাত্র আধ ঘণ্টা হয়েছে। নাটকটা দু'ঘণ্টার। বেজায় অশ্লীল খিস্তি, দৃশ্য আর মস্তিতে ভরা। স্টোরি লাইন – একজন ভিখারির নাট্যসম্রাট হয়ে ওঠা। নাটক শুরুর আবহ: চুদু চুদ চুদয়ে নমো / চুদু চোদাতে চোদাতে নমো...। প্রথম দৃশ্যে দ্যাখা যায় এক ভিখিরি রাস্তায় বসে ভিক্ষা করছে গান গাইতে গাইতে – কীসের মাসি, কীসের পিসি, কীসের বৃন্দাবন / এতদিনে জানলাম আমি চোদনে গুপ্তধন। এই চোদন সংগীতে তাঁর প্রতি একের পর এক মেয়ে আকৃষ্ট হয়। ভিখিরির অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। তিনি নাট্যসাধনা চালিয়ে যান নিভৃতে। আস্তে আস্তে হয়ে ওঠেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্য অভিনেতা। জীবন সায়াহ্নে তিনি তাঁর শেষ অভিনয় করেন পাঞ্জাবি নাটকে। নাটকটিতে তাঁর অসাধারণ অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে দেশের মধ্যে অন্যতম ধনী এক পাঞ্জাবি তাঁকে এক কোটি টাকা দ্যান। আর মাইকে ঘোষণা করেন “আপ চোদনগীত মে সর্ব্শ্রেষ্ঠ্ হ্যায়, নাটক মে ভি হ্যায়, হাম সির্ফ সিং হ্যায়, লেকিন আপ নাট্যিয় চোদন সিং হ্যায়”। এখানেই নাটক শেষ হয়। শুরুর চুদু আবহ আবারও বাজতে থাকে।
রাত ন'টা পঁচিশে বুলেটপ্রুফ গাড়িটা পৌঁছায় গড়িয়াহাট ওয়াইল্ড-এ, কামু বাবু পৌঁছে যান একশো দু'নম্বর রুমের সামনে রাত ঠিক সাড়ে ন'টায়। বাড়াটা টিপে দ্যাখেন সেই এক হাইটে পেট অবধি উঠে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা নক করেন। মোবাইল ফোনের সেই কণ্ঠ ভিতর থেকে উত্তর দ্যায় “কামিং”। দরজা খুলে ঢুকে সোফায় বসেন কামু। ঘরে শবনম বা আগুন-এর কেউ নেই। ভিতরে যাওয়ার দরজাটাও বন্ধ। মিনিট দশেক পার হয়ে যায়। অধৈর্য হয়ে ওঠেন কামু। আবারও সেই এক কণ্ঠ ভেসে আসে, “ওয়েট বাবা, কামিং”। আরও মিনিট খানেক পরে দরজা ওপেন হয়। বেরিয়ে আসছে শবনম আর আগুন, মিহি চিকন শাড়ি পরে, যা স্লিপ করে নেমে যেতে চাইছে শরীর থেকে। এখন মুখোমুখি কামু আর শবনম। কামু আর আগুন। ওরা খিলখিল করে কামোন্মত্ত কণ্ঠে হেসে ওঠে। আঁচল স্লিপ করে পড়ে যায়। আর তখনই নিভে যায় ঘরের আলো। সে-অন্ধকারে কামু অনুভব করেন বাড়াহিটসহেড। কয়েক মিনিট অন্ধকারে শুধুমাত্র হাসি আর শীৎকারধ্বনি ঘরময় ম-ম করতে থাকে। নীল আলো ক্রমশ ফেইড-ইন করতে থাকে সারা ঘরে। আর সেই আলোয় অস্পষ্ট ভাবে কামু দ্যাখেন শবনম আর আগুন-কে। পরমুহূর্তে শুধু কমরেড লেনিন-কে। তার পর দুটো জংলি হাতিকে। এই তিনটে দৃশ্য চক্রাকারে ক্রমাগত দেখতেই থাকেন। এক সময় স্থির হয়ে যান। আর কিছুই দেখতে পান না। কারণ, তাঁর বাড়া ব্যাক ফায়ার করে। মানে সামনে বাড়তে না-পেরে গুটিয়ে ছোটো হয়ে প্রবেশ করেছে দেহের ভিতর, তার পর বেরিয়ে এসেছে সোজা মুখ দিয়ে। তাই চোখের সামনে এখন শুধুই বিগ্ বিগ্ ক্লোজ-আপে সেই বাড়াটাই। সেই সময়েই কলকাতার দশ কোণে শোনা যায় পাল পাল জংলি হাতির গর্জন। আর কোরাস ফিস্ফিসানি “পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরা দোস্ত্”।
No comments:
Post a Comment